নারীর মাথায় কেশ বিরল হওয়াও সচরাচর দেখা যায়। এটি কেবল ছেলেদের সমস্যা, তা নয়। অস্থায়ী বা স্থায়ী কেশহানি যাদের হয় তাদের ৪০% হলো নারী। কারো দেখা যায় মাথা জুড়ে এখানে-ওখানে কেশ পাতলা হয়ে যাচ্ছে আবার কারো দেখা যায় মাথার কেন্দ্রে কেশ বিরল হচ্ছে। অনেকের মাথার শীর্ষে টেকো হয়ে যাচ্ছে। তবে সামনের দিকে পুরুষের মত নারীদের কেশ রেখা পিছু হটেনা।
কি করে গজায় চুল
মাথায় চুলের সংখ্যা হলো গড়ে ১০০,০০০। প্রতিটি কেশবৃন্তে একটি কেশ গজায়। প্রতিমাসে এক ইঞ্চি পরিমাণ বাড়ে। দুই থেকে ছয় বছর বেড়ে উঠার পর কেশ পতনের পূর্বে কেশ একটু বিশ্রাম নেয়, স্থির হয়। অচিরেই নতুন কেশ এর স্থান পরিপূরণ করে। আবার চলে সেই চক্র। একই সময়ে ৮৫% কেশ থাকে বৃদ্ধির পর্যায়ে, বাকি থাকে স্থির হয়ে।
কতখানি কেশ পতন হওয়া স্বাভাবিক
যেহেতু স্থির হয়ে থাকা মাথার কেশগুলো নিয়মিত পতন হয়, বেশিরভাগ লোকের দিনে চুল পড়ে গড়ে ৫০-১০০টি। পড়ে যাওয়া চুল হয়ত পাওয়া যায় চুলের ব্রাশে বা টাওয়ালে অথবা পোষাকে। অস্বাভাবিক কেশ পতন হতে পারে নানা ভাবে। শ্যাম্পু করার সময় বা স্টাইল করার সময় পড়ে যায় চুলের গুচ্ছ। বা কালক্রমে চুল পাতলা হয়ে আসে। চুলের তেমন পরিবর্তনে ভাবনায় পড়লে চিকিত্সকের পরামর্শ করা উচিত।
কেশহানির মূল সন্ধানে
নারীদের মাথায় কেশ বিরল হওয়ার পেছনে রয়েছে অন্তত: ত্রিশ রকমের স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেক ক্ষেত্রে লাইফ স্টাইল উপাদানও দায়ী। কখনও কখনও নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়না। শুরুতে বিশেষজ্ঞরা থাইরয়েড সমস্যা ও অন্যান্য সমস্যা সন্ধান করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কারণ পেলে এর চিকিত্সা হলে কেশ বৃদ্ধি ফিরে যায় আগের মত।
নারীর কেশহানি পরিমাপ
স্যাডিন স্কেল হলো প্রচলিত পরিমাপন স্বাভাবিক কেশ ঘনত্ব থেকে শুরু করে পুরোটাক মাথা (বিরল দৃষ্ট) পর্যন্ত-এর পরিধি। নারীর টেকো হওয়ার ধরণ নির্ণয়ে বেশ উপযোগী। এদেশে পরিসংখ্যান জানিনা, তবে আমেরিকাতে ৩০ মিলিয়ন নারী কেশ বিরল হওয়ার সমস্যায় জর্জরিত। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, ‘এনড্রোজেনিক এলোপেশিয়া’র ক্ষেত্রে জীনগতি ও বাধক্য দায়ী। আর বয়:সন্ধিতে হরমোনের পরিবর্তন। কেশ পাতলা হতে পারে সর্বত্র, আর মাথার কেন্দ্রে কিছুটা টেকো হওয়া। নারীদের ক্ষেত্রে কেশ রেখা তেমন পিছু হটেনা। কদাচিত্।
কেশহানি উসকে দেয়, পিসিওস (পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম)
যেসব নারীর পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওস) এদের রয়েছে ক্রনিক হরমোন ভারসাম্যহানি। নারী শরীরে তৈরি হয় বেশি এনড্রোজেন, এতে মুখে ও শরীরে গজায় বাড়তি চুল অথচ মাথার উপর চুল পাতলা হয়ে যায়। এরোগে ডিম্বস্ফোটনে হয় সমস্যা, ব্রণ এবং ওজন বৃদ্ধি। তবে অনেক সময় স্পষ্ট লক্ষণ হলো চুল পাতলা হয়ো যাওয়া।
থাইরয়েড সমস্যা
গলার সামনে প্রজাপতি আকৃতি গ্রন্থি এই থাইরয়েড। এথেকে নি:সূত হয় থাইরয়েড হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের নানান কর্ম। থাইরয়েড যদি খুব বেশি বা খুব কম হরমোন নি:সরণ করে তাহলে মাথার চুলের হরাস-বৃদ্ধিতে ঘটে গোলমাল। তবে থাইরয়েড সমস্যার একমাত্র লক্ষণ হলো চুল পড়ে যাওয়া তাও নয়। অন্যান্য উপসর্গ হলো ওজন বৃদ্ধি বা হরাস, ঠান্ডা গরমে সংবেদনশীলতা এবং হূদস্পন্দন হারে পরিবর্তন।
এলোপেসিয়া এরেটা
এলোপেসিয়া এরেটা ছোপ ছোপ জায়গায় চুলের পতন। বিরল চুল ছোট ছোট দ্বীপ মাথায়। দোষটি বর্তায় দেহ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর। ভুলক্রমে দেহপ্রতিরোধ কোষগুলো আক্রমণ করে কেশবৃন্তকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষতিটি স্থায়ী নয়। স্থানগুলো ভরে যায় ৬ মাস, এক বছরে। কদাচিত্ শরীরের সব লোম, মাথার সব চুল পড়ে যায়।
রিংওয়ার্ম সংক্রমণ
যখন রিংওয়ার্ম মাথায় সংক্রমণ ঘটায়, ছত্রাকটি একধরণের নির্দিষ্ট কেশহানি ঘটায়। খুব চুলকায়, গোলাকার কেশহীন ছোপ। কেশহীন এলাকাগুলোতে শল্ক উঠে গিয়ে লাল হয়ে যায়। ছত্রাকরোধী চিকিত্সা প্রয়োজন হয়। সরাসরি সংস্পর্শে ছত্রাকটি ছড়ায় তাই পরিবারের অন্য সদস্যদেরও চেক করা ভালো।
সন্তান প্রসব উসকে দিতে পারে কেশপতন
অনেক নারী লক্ষ্য করেন যে, গর্ভবতী হলে মাথার চুল খুব ভরে উঠে। হরমোন মান উঠে যায় উচুতে। যেগুলো কেশপতনকে ধরে রাখে। কিন্তু এই সুরক্ষা ক্ষণকালের জন্য। সন্তান প্রসবের পর হরমোন মান যখন স্বাভাবিক মানে ফিরে আসে তখন একসাথে অনেক চুল পড়ে যায়। আবার স্বাভাবিক হতে লাগতে পারে দু’বছর।
গর্ভনিরোধক বডি খেলে চুল পড়তে পারে
গর্ভনিরোধক বড়ি খেলে চুল পড়তে পারে। যে হরমোনগুলো ডিম্বস্ফোটন দমন করে সেগুলো অনেক নারীর মাথার কেশ পাতলা করে দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের পরিবারে মাথার চুল পড়ার ইতিহাস আছে। অনেকক্ষেত্রে পিল ছাড়ার পর কেশ পতন কমে যায়। কেশ পতনের সঙ্গে সম্প্রকিত অন্যান্য ওষুধ হলো রক্তপতল করার ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, হূদরোগের ওষুধ, আথ্রাইটিস ও বিষন্নতার ওষুধ। ক্যান্সারের চিকিত্সা করলেও চুল পড়তে পারে।
ক্রাশ ডায়েট
চট্জলদি কঠোর ডায়েটিং করে অনেক ওজন একসঙ্গে কমালে, ১৫ পাউন্ড ওজন হারানোর পর ৩-৬ মাসে বেশ চুল পড়ে পাতলা হয়। আবার স্বাভাবিক ডায়েটে ফিরে এলে চুল গজাতে পারে নতুন করে।
আঁট-সাট হেয়ার স্টাইল
আঁট-সাট ভাবে চুল বাঁধলে, টেনে পনিটেল করলে, অনেকে অনেকগুলো আঁট-সাট বিনুনিও করেন। করোটি বেশ উত্তেজিত হয়, চুল তখন পড়তে পারে। চুল বাঁধুন স্বাভাবিকভাবে, আলতো, আলগা করে। তাহলে চুল থাকবে ভালো।
ক্যান্সারের চিকিত্সা
ক্যান্সার চিকিত্সা, কেমো ও বিকিরণ চিকিত্সা দুটো অখ্যাত চিকিত্সার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো কেশ হানি। ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার প্রক্রিয়ার মধ্যে কেশবৃন্তেরও ক্ষতি হয় বেশ। তখন ঘটে নাটকীয়ভাবে চুল পড়া সমস্যা। তবে ক্ষতিটি ক্ষণস্থায়ী। থেরাপি শেষ হলে আবার চুল গজাতে থাকে।
প্রচন্ড চাপ
প্রচন্ড শরীরিক ও মানসিক চাপ মাথার একতৃতীয়াংশ বা অর্ধেক কেশের পতন ঘটাতে পারে। যেমন- গুরুতর অসুখ বা বড় রকমের সার্জারি, বড় রকমের আঘাত ও রক্তক্ষরণ, গুরুতর মানসিক আঘাত ও আবেগ বৈকল্যেও চুল পড়তে পারে ৬-৮ মাস পর্যন্ত।
চুলপড়ার চিকিত্সা ও ওষুধ
মিনোক্সিডিল (রোগেন) নারীসুলভ কেশ পতনের জন্য এফডিএ অনুমোদিত ওষুধ। অনেক নারীদের ক্ষেত্রে কেশহানি রোধ বা হরাস করতে পারে এবং কিছু মহিলার ক্ষেত্রে নতুন কেশ গজাতেও পারে। একে প্রয়োগ করা বন্ধ করলে হিতকরী গুণ আর থাকে না। এলোপেসিয়া এরেটা হলে স্টেরয়েড দেন অনেকে। কেশ পতনের পেছনে অন্তর্গত কোনও রোগ থাকলে সে রোগ চিকিত্সা করালে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায় কখনও কখনও।
লেজার ডিভাইস
যে লেজার প্রযুক্তি বিচ্ছুরণ করে কম শক্তি লেজার আলোকে, পাতলা চুলের বিরুদ্ধে এই আলো চুল গজানোকে উদ্দীপিত করতে পারে। এদের মধ্যে একটি এফডিএ অনুমোদিত।
নারীদের ক্ষেত্রে হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট
এই পদ্ধতিতে ডোনার সাইট বা দাতাস্থল থেকে মাথার চুল পাতলা হওয়া স্থানে কেশ রোপন। সমস্যা হলো নারীসুলভ কেশবিহ্বলতা ঘটে মাথার সর্বত্র। তাই যথাযথ ডোনার সাইট পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
পাতলা চুলকে সামলানো
হেয়ার স্ট্রাইলিস্ট টিপস দিতে পারেন। শর্টকাট, ডিফারেন্ট পার্ট বা হালকা বডি ওয়েভ। পাতলা চুলের জন্য স্টাইলিং প্রোডাক্ট পাতলা চুল আড়াল করতে সহায়ক। কেশমূলে একে প্রয়োগ করে ব্লোড্রাই করে এর আয়তন বাড়ানো। আছে বিশেষ প্রসাধনী। কেরাটিন ফাইবার হেয়ার কসমেটিকস উপযোগী।
খুব বেশি চুল পড়লে
স্থায়ী কেশহানি সামলানো কঠিন ও জটিল। বিরল কেশ এলাকা খুব স্পষ্ট হলে টেকো স্থান আড়ালের জন্য ব্যবহার করা যায় হেয়ারপিস, স্কার্ফ বা মথার টুপি। ভালো মানের পরচুলা বেশ কাজ দেয় ও উপযোগী। মনের সমস্যা হলে মনোচিকিত্সকের পরামর্শ নেয়া ভালো।
আরো অনেকে খুজেছে
- চুলপড়া সমস্যার সমাধান; মাথা থেকে চুল উঠার সমস্যা; পিসিওস কি ভাল হই নাহ; পলিসিসটিক ওভারি; ডায়েটে চুল পড়া সমস্যা; চুলের ডাক্তারের নাম্বার; চুল পড়ার সমাধান DOCTOR MBBS; চুল উঠার প্রতিকার কি; চুল উঠ;হেয়ার স্টাইল;
No comments:
Post a Comment